কামাল হোসেন:
সুনামগঞ্জে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করে প্রত্যয়ন সনদ দিয়ে স্বাস্থ্য সহকারী পদে দুই ব্যক্তিকে চাকরির ক্ষেত্রে সহায়তা করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ইউপি চেয়াম্যানের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত চেয়ারম্যান জেলার সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউপি চেয়ারম্যান রসিদ আহামেদ। চেয়ারম্যান রসিদ আহামেদ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে টাকার বিনিময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ওই ইউনিয়নের সাবেক ১ নং ওয়ার্ডেও এবং র্বতমানেও ২নং ওর্য়াডের বাসিন্দা নুসরাত জাহান নাসরিন ও স্মৃতি নকরেকে ভুয়া প্রত্যয়ন সনদ দেয়ন।
অভিযোগ উঠেছে, নুসরাত জাহান নাসরিনের বড় ভাই ডা. সাইফুল ইসলাম সিভিল সার্জনের আওতাধীন বর্তমানে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে কর্মরত থাকার সুবাদেই ওই ভুয়া প্রত্যয়ন সনদের বদলওতেই ভাগিয়ে নেন স্বাস্থ্য সহকারী পদটি। বিষয়টি জানাজানির পর চাকরি প্রার্থী কুহিনূর সহ অন্য প্রার্থীরা চেয়ারম্যান রসিদ আহামেদের কাছে গিয়ে এক ওর্য়াডের নাসিন্দাকে কেন অন্য ওর্য়াডের প্রত্যয়ন দেয়া হলো জানতে চাইলে তিনি কুহিনুরসহ অস্য র্প্রাথীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন এবং নানান ভয়ভীতি দেখান। পরে নিরুপায় হয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে চাকরি পাওয়া দুইজন চূড়ান্ত র্প্রাথীর নিয়োগ বাতিল চেয়ে এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে স্থায়ীঠিকানা সঠিকায় এমন ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়ার জন্য গত ২ জুলাই ইউনিয়নের ঝরঝরিয়া গ্রামের মেয়ে খাদিজা আক্তার ও কোহিনূর বেগম হাইকোর্টে একটি রিট আবেন করেন। এবং গত ২৯ আগষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আরও একটি লিখিত আবেদন করেন কুহিনুর বেগম। আবেদনে কুহিনূর বেগম উল্লেখ করেন, এবং গত ১৭/০৮/২০২৩ইং সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস কর্তৃক স্বাস্থ্য সহকারী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তির ৫ ও ১৩ শর্ত পূরণ সাপেক্ষে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নস্থ সাবেক ২ ও বর্তমান ৫ ঝরঝরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী পদে আবেদন করেন কুহিনূর বেগমসহ অনেকেই। এবং লিখিত পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভাইভায় অংশ গ্রহণ করেন কুহিনুরসহ ১১ জন প্রার্থী। কিন্তু বিগত ০৭/০৫/২০২৪ইং চূড়ান্ত ফলাফলে ওই ইউনিয়নের সাবেক ১নং ওয়ার্ড ও বর্তমানেও ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কান্দাপাড়া গ্রামের আজাদ মিয়া মেয়ে নুসরাত জাহান নাসরিন, জাতীয় পরিচয়পত্র নং- ৬০০৩৫৪৮৮:৩৮ ও রোল নং ২৪৫০১৯০৭৭০২ এবং কাশ্মীর পাড়া নিবাসী আশীষ মারাকের মেয়ে স্মৃতি নরেক, জাতীয় পরিচয়পত্র নং- ৫১১৭১৬৪৯১২ ও রোল নং- ২৪৫০১৯১২৫২৫ নাম প্রকাশ পায়। তারা উভয়েই জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের সাবেক ০১নং ওয়ার্ডের এবং র্বতমানেও ১ নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি আরও উল্লেখ করেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির এর শর্তাবলী ৫ ও ১৩ নং শর্তের নিয়ম ভঙ্গ তথ্য গোপন করে জালিয়াতির মাধ্যমে ২নং ওয়ার্ডের যোগ্য প্রার্থী থাকার পরেও ২ নং ওয়ার্ডের স্বাস্থ্য সহকারী পদে নিয়োগ পায় দুইজনই ১নং ওয়ার্ডের। পরবর্তীতে নুসরাত জাহান নাসরিন ও স্মৃতি নরেকের নিয়োগ বাতিল চেয়ে গত ০৮/০৫/২৪ইং সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কাছে আরও একটি আবেদন করেন কুহিনূর বেগম। এবং চূড়ান্ত যোগদানে প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার সময় যেনো স্থায়ী ঠিকানা সঠিক যাচাই বাচাই পূর্বক নুসরাত জাহান নাসরিন ও স্মৃতি নরেককে স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করে প্রত্যয়ন সনদ দেয়া হয়। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের সাবেক ২নং ওয়ার্ডের বর্তমান ৪, ৫, ৬নং ওয়ার্ড সদস্যদেরকে নিয়ে চেয়ারম্যান রসিদ আহামেদকে অবহিত করেন। এ সময় নুসরাত জাহান নাসরিন ও স্মৃতি নরেক সাবেক ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নয়। এবং তাদের সাবেক ২নং ওয়ার্ডের পরিচয় দিয়ে প্রত্যয়ন দেয়া হবেনা বলে চেয়ারম্যান, ২নং ওয়ার্ডেরসহ বর্তমান ৩ জন ইউ/পি সদস্যসহ তাদের আশস্ত করেন। কিন্তু পরবর্তীতে নুসরাত জাহান নাসরিন ও স্মৃতি নকরেকে কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে ইউপি সদস্যদের অজান্তেই চেয়ারম্যান রসিদ আহামেদ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে সাবেক ১নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া সত্যেও তাদের সাবেক ২ নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা বানিয়ে প্রত্যয়ন দেন। কিন্তু বিগত ১৮/০৫/২০২৪ইং চাকরি প্রার্থী আব্দুর রহমান তনয় কে সাবেক ০১ ও বর্তমান ০১নং ওয়ার্ড ও ৩০/০৪/২০২৪ইং নূর ‘উদ্দিন আহমেদ কে সাবেক ০৩ ও বর্তমান ০৯নং ওয়ার্ড হিসেবে স্মারক নং ২০২৪/৩৩৫, ২০২৪/৩০০ দুটি সঠিক প্রত্যয়নেই সাবেক বর্তমান উল্লেখ করে প্রদান করেন। গত ১৮/০৫/২৪ ইং টাকার কাছে বিবেক বিসর্জন নিয়ে চেয়ারম্যান রসিদ আহামেদ জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে সাবেক ও বর্তমান কোনকিছুই উল্লেখ না করে প্রত্যয়ন দিয়ে নুসরাত জাহান নাসরিন ও স্মৃতি নকরেকে চাকরির নিয়োগ পেতে সহায়তা করে। যার ফলে বৈধ কাগজপত্র ও নাগরিক সনদপত্র থাকার পরেও সাবেক ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হওয়া শর্তেও কুহিনূর বেগমসহ অন্য হতদরিদ্র চাকরি প্রার্থীরা চাকুরী না পেয়ে যেমন ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে, তেমনি অনেকে বেকারত্বের গøানি মাথায় নিয়ে পা বাড়াচ্ছেন বিপদগামী পথেও। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে দেয়া চেয়ারম্যান রসিদের প্রত্যয়ন গুলি তদন্তপূবর্ক অভিযোগটি আমলে নিয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান কুহিনূর বেগম অন্য প্রার্থীরাও।
এ বিষয়ের সত্যতা জানতে চেয়ারম্যান রসিদ আহামেদের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ভাই আমার মনে নেই। কাগজ পত্র না দেখলে বলতে পারবো না। যেটা আমি পাইছি সেটাই আমি দিছি। নুসরাত জাহান নাসরিন ও স্মৃতি নরেক সাবেক ১ নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া শর্তেও আপনি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বানিয়ে প্রত্যয়ন দিয়েছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি( চেয়ারম্যান) কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এবং তিনি নিউজ না করার জন্য ও প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমি মান্নান অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে যাই আসবে সে অনুয়ায়ীই ব্যবস্থা নেয়া হবে।